মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি চাহিদা হলো বস্ত্র। আমরা সবাই জানি বস্ত্র আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বড় চালিকা শক্তি হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্প। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বস্ত্র সমূহের যোগান দিয়ে থাকে এই গার্মেন্টস। এই শিল্পের মূল উপাদান হচ্ছে কাপড় আর এই কাপড় তৈরির কলা-কৌশলের পেছনে রয়েছে টেক্সটাইলের অবদান। টেক্সটাইল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যের জন্য টেক্সটাইল ভিন্ন-ভিন্ন ফেব্রিক্স বা কাপড় উৎপাদনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। কাপড়ের মান ভালো হলে তৈরি পোশাক মানসম্মত হয়।
বাঙ্গালী নারীর ঐতিহ্যবাহী শাড়ি অথবা কোনো সৌখিন পুরুষের কারুকাজ খচিত পাঞ্জাবি কিংবা কোন পল্লীবধূর মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি নকশী কাঁথা টেক্সটাইলের অন্তর্ভুক্ত। বাংলার প্রকৃতির সবুজ আর ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের দাগ আমরা যে কাপড়ের মাঝে এঁটে দিয়ে জাতীয় পতাকার মর্যাদা দিয়েছি সেই কাপড় এসেছে টেক্সটাইল এর মাধ্যমে। তুলা থেকে সুতা উৎপাদন করে দক্ষ কারিগরের ঠকঠক শব্দে বুনন কাজ করার মাধ্যমে টেক্সটাইলের পদযাত্রা শুরু হলেও আজ তা এগিয়ে গিয়েছে বহুদূর।
আজ আমাদের দেশে খাদ্যের অভাবে অনাহারী মানুষ খুঁজে পাওয়া গেলেও বস্ত্রের অভাবে নির্বস্ত্র মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। টেক্সটাইল এর আওতা বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক। তাঁত শিল্পে বুনন কার্য অনেক কষ্টসাধ্য কাজ হলেও আধুনিক বিজ্ঞানে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির কল্যাণে আজ তা সহজতর হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়। আর সবচাইতে বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় মানুষের পরিধেয় বস্ত্রের উপর। মানুষের রুচিশীল পরিবর্তনের বিষয়টি যথাযথ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নতুনত্বের আগমন ঘটাচ্ছে টেক্সটাইল। তারা সহজেই মানুষের রুচি অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী বস্ত্র তৈরীর পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে টেক্সটাইলের ভূমিকা
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প নিজ দেশে কতটা সমৃদ্ধশালী? আমরা নিজেরা নিজেদের দেশে উৎপাদিত কাপড় এর মানকে কতটা মূল্যায়ন করে থাকি? কেন আমরা বিদেশি কাপড়ের মানকে বেশি প্রাধান্য দেই? যদি এই প্রশ্নগুলো সরাসরি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে সে হয়তো নিচু গলায় উত্তর দেবে আমরা ভালো মানের নতুনত্ব কাপড় পছন্দ করি কিংবা বলবে অন্য দেশের কাপড়ের মান যাচাই করে দেখছি। তাহলে আমাদের অপূর্ণতা কোথায়? আমরা কি শুধু ‘আকর্ষণ’ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে মানের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছি? তাহলে কি আমাদের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা এখনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত নয়? আমরা কি নিজ দেশে আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ? উত্তর হচ্ছে ‘না’। আমরা নিজ দেশের কাপড়ের উপর আস্থা রাখি না এটা কাপড়ের দোষ নয় এটি আমাদের জ্ঞানের পরিধির স্বল্পতা। আমরা নিজেরাই এখন পর্যন্ত অবগত নই যে আমাদের দেশেও ভালো মানের কাপড়ের আধুনিক পোশাক উৎপাদিত হচ্ছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাস এর প্রভাবে সারা বিশ্ব থমকে দাড়িয়েছে। নেমেছে অর্থনৈতিক ধস। গার্মেন্টস শ্রমিকরা আজ আশায় বুক বাঁধে আবারো পূর্বের গতিতে চলমান হবে থেমে থাকা সেলাই মেশিন। কাঁচামালের ব্যয় কমিয়ে মানসম্পন্ন পোষাক তৈরীর প্রতি আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের রুচি এবং চাহিদা অনুধাবন করা। বিভিন্ন উৎস থেকে আমাদের কাঁচামাল তৈরীর পদ্ধতি জানতে হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে সময়পোযোগী পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। অন্য দেশের টেক্সটাইলের কলাকৌশল শুধু দেখলেই হবে না নিজ দেশেও তার বিকাশ ঘটাতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নিজ দেশের পণ্যের ওপর শ্রদ্ধা ও আস্থাশীল হতে হবে। তবেই আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প আরো অগ্রসর হবে। কাল্পনিক স্বপ্নে বিভোর না হয়ে সময় হয়েছে বাস্তবিকভাবে টেক্সটাইল খাত উন্নীত করা। একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার এর সৃজনশীল মনোভাব পাল্টে দিতে পারে একটি দেশের ভবিষ্যৎ।
Author: মোঃ মিথুন খান
প্রতিষ্ঠান: আদর্শ ডিগ্রি (অনার্স) কলেজ
ডিপার্টমেন্ট: ব্যবস্থাপনা