টেক্সটাইল সেক্টরের 3R| বর্তমান যুগ টেক্সটাইলের যুগ। টেক্সটাইল বাংলাদেশের মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টর পুরো বিশ্বের মধ্য ৩য় অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরকে আরো এগিয়ে নিতে চাইলে কিছু জিনিসের প্রতি ফোকাস করতে হবে। তার মধ্যে 3R (Reduce, Reuse, Recycle) অন্যতম। একটা দেশের গার্মেন্টস ফেক্টরি পরিবেশের ক্ষতি না করে সুষ্ঠ, সুন্দর ভাবে চালানোর জন্য 3R মুখ্য ভুমিকা পালন করে।
টেক্সটাইল সেক্টরের 3R
টেক্সটাইল সেক্টরের Reduce:
Reduce মানে হ্রাস করা। একটি টেক্সটাইল ফেক্টরিতে একটা নির্দিষ্ট কাপড় তৈরি করতে অনেক ধরনের কাচামাল লাগে। আমরা যদি দিন দিন এই ফেক্টরির বিষাক্ত কাচামাল কমিয়ে আনতে পারি তাহলে আমাদের খরচও কম হবে সাথে পরিবেশ ও দূষণ রোধ হবে। আমরা জানি এই টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ পানি দূষণ এই গার্মেন্টস ফেক্টরির কারনেই হয়। একটি ফেব্রিক রংয়ের জন্য প্রতিবছর ৫ ট্রিলিয়ন লিটার (১.৩ গ্যালন) পানি ব্যবহার করা হয় যা ২ মিলিয়ন অলিম্পিক আকারের সুইমিংপুল পূরন করার পক্ষে যথেষ্ট।
♦তুলা থেকে রঞ্জন প্রক্রিয়া পর্যন্ত কেবল এক জোড়া জিন্স এবং একটি টি-শার্ট তৈরি করতে আনুমানিক ২০০০ লিটার পানি প্রয়োজন।
টেক্সটাইল প্রসেসিং অপারেশন জুড়ে পানি প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ফেব্রিকস প্রস্তুতির জন্য যেমন ডিজাইনিং, স্কাউরিং, ব্লিচিং এবং ম্যাসেরাইজিং সহ জলজ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত পানি ব্যবহারের ফলে পানি দূষণ বাড়ছে। আমাদের দিন দিন পানির ব্যবহার কমাতে হবে এবং পানির বদলে ফেব্রিকস এ ড্রাই ওয়াশ করতে হবে।
টেক্সটাইল শিল্পে তৈরি বর্জ্যের কিছু অংশে কাপড় এবং ছাটা থাকে কিন্তু এতে বোতাম, সূচিকর্ম থ্রেড এবং অন্যান্য ডেকরেটিং রয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন ১০% – ২৫% ফেব্রিকস নষ্ট হয়। ভুল ছাপ এবং সূচিকর্ম ভুল দ্বারা বর্জ্য তৈরি করে। মুদ্রণ এবং সূচিকর্ম যদি দক্ষতার সাথে করা হয় তবে এটি টেক্সটাইল বর্জ্যকে অনেকাংশে দূরে রাখতে সহায়তা করবে।
টেক্সটাইল সেক্টরের Reuse:
Reuse মানে পুনঃব্যবহার। টেক্সটাইল সেক্টরে যদি আমরা কোন জিনিসকে পুনঃব্যবহার করি তাহলে আমাদের সময় এবং টাকা দুটোই বাচবে। একটা জিনিসকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রসেসিং করতে যত সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক কম সময় লাগবে যদি আমরা সেটা পুনরায় ব্যবহার করি। আমরা জানি টেক্সটাইল সেক্টর আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূষনকারী। গড় গ্রাহক প্রতি বছর ৩০ কেজি পোষাক ফেলে দেয়। বিশ্বব্যাপি টেক্সটাইল বর্জ্য প্রতিবছর ১৩ মিলিয়ন টন যোগ হয়।
সমস্ত টেক্সটাইলের ৮৫% প্রতি বছর ল্যান্ডফিলে যায়। যেখানে 97 % পূনরায় ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে প্লাস্টিক আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে গেছে। কারন বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক খুব বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সেকেন্ডে ১৫০০ প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনভাবে চলতে থাকলে একসময় পৃথিবীটা প্লাস্টিকের দখলে এসে পরবে। তাই আমাদের আগে থেকেই প্লাস্টিক কম ব্যবহার করা উচিত এবং এটার পুনঃব্যবহার করা দরকার। প্লাস্টিকের মত গার্মেন্টস ফেক্টরির পানিও পুনরায় ব্যবহার করা লাগবে। কারন দূষিত পানি আর ভয়ংকর প্লাস্টিক দুটোই আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। একটা কাপরের গড় আয়ু কাল ৩ বছর। অথচ আমরা একটা কাপড় সর্বোচ্চ ৭-৮ মাস ব্যবহার করি এবং তা পরে ফেলে দেই। কিন্তু একটা পুরোনো কাপড় দিয়েও কিন্তু অন্য কাজ করা যায়। YouTube এ visit করলে অনেক কিছু দেখতে পারবেন। তাই Reuse আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি সময়, শ্রম, টাকা সবই রক্ষা করে।
টেক্সটাইল সেক্টরের 3R
টেক্সটাইল সেক্টরের Recycle:
Recycle মানে ব্যবহার করা জিনিসকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে প্রসেসিং করে আবার ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা।
মূলত টেক্সটাইল রিসাইকেল হল পুরানো সুতা বা ফেব্রিক বা অন্য কোন মেটেরিয়াল উদ্ধার করে এবং তা পরে রাসায়নিক পদ্ধতিতে অন্য একটি টেক্সটাইল উপাদানের সাথে মিশ্রিত করে নতুন একটি পন্য তৈরি করা।
অনেকগুলো টেক্সটাইল ফাইবার একসাথে মিশ্রিত করে Composite Fibre তৈরি করে। এবং কি Waste Fibre দিয়েও Composite Fibre তৈরি করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে স্মার্ট টেক্সটাইলকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে Composite Fibre যেমন কেভলার ফাইবার, কার্বন ফাইবার, ফাইবার গ্লাস ইত্যাদি। মহাকাশ ভ্রমনের জন্য স্যুট তৈরিতে, বিমান তৈরিতে, ভাল উন্নত মানের গাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এই ফাইবার। Waste Materials কে ভালমত Recycle এবং প্রসেসিং করে এই ধরনের ফাইবার তৈরি করা সম্ভব।
আমরা জানি পলিথিন এবং প্লাস্টিক আমাদের পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ। বাইরের কয়েকটা দেশ এই পলিথিন এবং প্লাস্টিক নিয়ে কাজ করছে এবং আমাদের বাংলাদেশেও এর নমুনা দেখা যাচ্ছে। পলিথিন এবং প্লাস্টিক কে উচ্চ তাপমাত্রায় গলালে পেট্রোল এবং ডিসেল তৈরি হয়। কারন প্লাস্টিকে সবসময় অপরিশোধিত তেল থেকে তৈরে করা হয়। এটি একটি সমস্যা, কারণ অপরিশোধিত তেল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দূষণ নির্গত করে এবং এর অর্থ হল পণ্যটি বায়োডেগ্রেডেবল নয়। একটি প্লাস্টিক বায়োডেগ্রেড করতে কমপক্ষে 400 বছর সময় লাগে যার।
তাই প্লাস্টিক, পলিথিন, ভিবিন্ন Waste Materials ; Recycle করে পরিবেশকে ভাল রাখা যায়। আমাদের উচিত বাংলাদেশের কিছু গার্মেন্টস ফেক্টরি গুলাতে এসব Waste Materials নিয়ে কাজ করা। তবেই বাচবে জাতি, বাচবে দেশ।
Source:
Wikipedia
Youtube
Textile Today
বিজ্ঞানবার্তা
About the Author
Najmul Islam
BGMEA University of Fashion and Technology.
Batch: 191
Department of Textile Engineering
Join our Facebook Group