টেক্সটাইল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

টেক্সটাইল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; বাংলাদেশে টেক্সটাইল সেক্টরটি অনেক বেশি প্রসারিত।এখানে ৫০০০ এর কাছাকাছি ফ্যাক্টরী রয়েছে। প্রতিনিয়ত এই ফ্যাক্টরীগুলোতে বিপুল পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে গার্মেনটসের পন্য। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি এই পোশাক শিল্প। বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই প্রশংসার দাবিদার।

তবে কথায় আছে প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরিত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ঠিক তেমনি আমাদের এই শিল্পেরও কিছু নেগেটিভ সাইড রয়েছে। টেক্সটাইল সেক্টরকে বলা হয় ৩য়বৃহত্তর পরিবেশ দূষনকারী সেক্টর । এর দুষণের মাত্রা ভয়াবহ যা বর্তমানে আমাদের উদ্বেগের বড় কারন হয়ে দারিয়েছে। মাটি, নদি নালার পানি, বাতাস সবই এর বর্জ্য দ্বারা জর্জরিত। যা এখন সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার অধিনে আনা সময়ের দাবি। এর জন্য প্রয়োজন সকল স্তরের নাগরিকের সচেতনতা, দায়িত্ববোধ, হাতে হাত রেখে সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া।

 

টেক্সটাইল সেক্টরের বিভিন্ন স্তরের

এবং বিভিন্ন রকমের বর্জ্য :

 

 

কাঁচামাল সংগ্রহে তৈরি বর্জ্য:


আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কটন ফাইবারের। তাছাড়াও রয়েছে জুটের ফাইবার, ফ্লাক্স,  কেনাফ। এক্ষেত্রে মাঠ পরযায়ে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য যেমন : পাতা, গাছের স্টেম, ব্যবহার অযোগ্য নষ্ট, রোগাক্রান্ত ফাইবার পাওয়া যায়। কটন বেল তৈরির ক্ষেত্রে কটন সীড পাওয়া যায়। তাছাড়া সিল্ক ফাইবার এর ক্ষেত্রে মৃত ককোন গুলোও সিল্কের বর্জ্য। ম্যানমেইড ফাইবার এর ক্ষেত্রেও কিছু বর্জ্য পেয়ে থাকি।

 

স্পিনিং প্রসেসিংয়ে তৈরি বর্জ্য :


অনেক ক্ষেত্রেই কটন স্পিনিং এ কটন বেলে ডিফেক্ট দেখা দিতে পারে যা অপসারণ যোগ্য নয়। সেক্ষেত্রে তা বর্জ্য হিসেবে গণ্য হয়। পর্যায়ক্রমে ব্লো রুমে, কার্ডিং এ, ড্র ফ্রেমে, লেপ ফরমেশনে কিছু ফাইবার বর্জ্য তৈরী হয়। ম্যানমেইড ইয়ার্ন এর ক্ষেত্রে ড্রাই স্পিনিং এ সলভেন্ট বর্জ্য পাওয়া যায়। তাছাড়াও বিভিন্ন ডাস্ট পারটিক্যাল বর্জ্য হিসেবে পাওয়া যায়।

 

টেক্সটাইল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

 

ওয়েট প্রসেসিংয়ে তৈরী বর্জ্য :

 

সবচেয়ে ক্ষতিকর বর্জ্য উৎপন্ন হয় টেক্সটাইল ওয়েট প্রসেসিং এ এক্ষেত্রে প্রচুর পানি ব্যবহার করতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং এ আমরা রং করার আগে এবং পরে নানা ধরনের ট্রীটমেন্ট করে থাকি। এক্ষেত্রে প্রচুর বর্জ্য পানি তৈরি হয়। অনেক সময়ই ক্যামিক্যাল অনাকাঙ্ক্ষিত কারনে ড্যামেজ হতে পারে। যা বর্জ্য হিসেবে পরিগনিত হয়। অনেক সময় ফ্যাক্টরিতে ভুল কালার মিক্সিং এর জন্য লিকার টা সম্পূর্নভাবে বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত হয়।  

 

ফেবরিক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে তৈরী বর্জ্য :


নিটিং এন্ড ওভেন ফেবরিক এর ক্ষেত্রে নানা ধরনের ফল্ট দেখা যায়। অনেক সময় ফেবরিকে পাট্টা পড়ে যায়। কালারে অনাকাঙ্ক্ষিত স্ট্রাইপ পড়ে যায়। যা পড়ে ব্যবহার অযোগ্য হিসেবে গন্য হয়। অনেক সময় উইভিং এন্ড নিটিং এর সময় ইয়ার্ন গ্যাপ থেকে যায়। যার কারনে ফেবরিক নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় ফেবরিকে কালার সেড এ ফল্ট থাকে যা দিয়ে প্রডাকশনে যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফেবরিক এ প্রিন্টিং ফল্ট থাকে যা ব্যবহার করা যায় না। অনেক সময় এমব্রয়ডারি করতে গিয়েও ফল্ট হয়।

 

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে তৈরী বর্জ্য :

 

অ্যাপারেল এ কাটিং এ অনেক ছোটোখাটো টুকরো কাপড় তৈরী হয়। যা বর্জ্য হিসেবে পরিগনিত। কাটিং এর সময় অনেক ক্ষেত্রেই মিজারমেন্ট এ প্রবলেম হয়। ফলশ্রুতিতে তা অগ্রহণযোগয্য হয়ে পরে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক মতো খেয়াল করি না ফেবরিকের কোয়ালিটি। যার কারনে অনেক সময় আমাদেরকে গারমেন্টস ফেরত দেওয়া হয়।

 

গারমেন্টস ব্যবহারে তৈরী বর্জ্য :


আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক কিনি। বেশিদিন ব্যবহার না করেই ফেলে দেই। আবার অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কারনে কাপরের কালার নষ্ট হয় বা ছিড়ে যায়, যা অনেক সময়ই আর পড়া হয় না।

 

টেক্সটাইল সেক্টরের বিভিন্ন স্তরের এবং বিভিন্ন রকমের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা 

 

রিসাইক্লিং :

 

এই ব্যবস্হাপনাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুবই কার্যকর এবং জনপ্রিয়। এই প্রকৃয়ার মাধ্যমে ম্যানমেইড স্পিনিং এর ক্ষেত্রে সলভেন্ট পুনরুৎপাদন করে কাজে লাগানো যায়। আমরা টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ব্যবহৃত অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক, পলিথিন পুনরুদ্ধার করতে পারি। কাটিং এ উৎপন্ন ছোটোখাটো টুকরা কাপর ঋবার আগের ফর্মে নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারি।আবার দীর্ঘকাল ব্যবহৃত জামাকাপর কালেক্ট করে এগুলোকে রিসাইক্লিং করা যেতে পারে। তাছাড়াও টেক্সটাইল

বর্জ্য ৯৭ ভাগ রিসাইক্লিং যোগ্য। বাংলাদেশের যারা টেক্সটাইল সেক্টরের পরিচিত মুখ, তাদের উচিত দ্রুত উন্নত টেকনোলজি দেশে নিয়ে এসে রিসাইক্লিং কার্যক্রম চালু করা।

 

পূনব্যবহার :


এই প্রকৃয়ার মাধ্যমে আমরা আর কোনো বর্জ্যকে বর্জ্য বলব না। এই ক্ষেত্রে আমাদের অব্যবহৃত টেক্সটাইলগুলোকে আমরা একই কাজে বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করব। আমাদের যেই গারমেন্টসগুলো ফেইল হয়ে যায় সেগুলো আমরা লোকাল মার্কেটে সেল করে দিতে পারি সুলভ মূল্যে। অনেক সময় আমাদের কটন বেলগুলো ডেমেজ হয়ে যায়। যা আমরা লোকাল মারকেটে সেল করতে পারি। এগুলো দিয়ে বালিশের কুশন, জাজিম ইত্যাদিতে ব্যবহার করা যায়। ইয়ার্ন প্যাকেজ আন ইভেন থাকলে লোকাল মার্কেটে সুতা হিসেবে বিক্রয় করা যেতে পারে।

 

ব্যবহৃত জামাকাপড় একাধিক হাতবদল :


আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক বেশিদিন ব্যবহার না করেই ফেলে দেই। এক্ষেত্রে আমরা জামাকাপড় ফেলে না দিয়ে জমা করতে পারি। এক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে উদ্যোগ নিয়ে এগুলো কালেক্ট করা যেতে পারে। একেবারে নূন্যতম মূল্যে বিক্রয় করা যেতে পারে।

 

ইটিপি/ ETP:

 

ইটিপি এর পূর্ণ রূপ Effluent Treatment Plant। এর মাধ্যমে টেক্সটাইল এর বর্জ্যকে দূর করা হয়। আমরা সকলেই অবগত একটা গারমেন্টস প্রোডাক্ট তৈরী করতে কি পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। এবং অনেক পানি দূষিত হয়। এই ট্রীটমেন্ট এর মাধ্যমে পানি থেকে দূষিত পদার্থকে দূর করা হয়। সেঐ পানিকেই আবার ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। তাছাড়া এর মাধ্যমে মেটাল পারটিক্যাল আলাদা করা হয়।

 

এনিম্যাল ফিডিং :

 

টেক্সটাইল কাঁচামাল এর উংস প্রকৃতি হলে সেক্ষেত্রে প্রকৃয়াজাত করার আগে যেই বর্জ্যগুলো পাওয়া যায় যেমন : পাতা, স্টেম, সীড এগুলো গবাদি পশুজীবকে খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া সীড থেকে একপ্রকার ওয়েল পাওয়া যায় ; যা খুব দামী।

 

ফারমেন্টেশন :

 

এই প্রকৃয়ার আরেক নাম গাজন প্রকৃয়া। এটি করা হয়ে সেলুলোজ এবং এর সমগোত্রীয় পদার্থের ক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে সেলুলোজকে দীর্ঘকাল ভিজিয়ে রেখে পচানো হয়। এতে এর ইন্টার মলিকুলার লিঙ্কেজ ভেঙে গিয়ে গ্লুকোজ এ পরিনত হয়। এই প্রকৃয়াও ব্যবহার করা যেতে পারে টেক্সটাইল বর্জ্যের ক্ষেত্রে।

 

জ্বলন প্রক্রিয়া :

 

যখন টেক্সটাইল এর বর্জ্য গুলোকে কোনা ভাবেই ব্যবস্হা করা যায় না তখন জ্বলন প্রকৃয়া ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সকলকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হয় এবং যাতে কার্বন মনোঅক্সাইড তৈরী হতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সকল বর্জ্য নিশ্বেষ হয়েছে কিনা তাও খেয়াল করতে হবে। বর্জ্য থেকে উংপন্ন ছাই খোলা জায়গায় ফেলে রাখা যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গায় মাটিচাপা দিতে হবে। 

 

ডিসপোসাল :

 

ডিসপোসাল এর আরেক নাম মাটিচাপা দেওয়া। আমরা সাধারণত মাটিচাপা দেই হার্ড বর্জ্যকে। এক্ষেত্রে আমরা তরল বর্জ্যকে ব্যবস্হাপনা করি না। এটিও মূলত করা হয় যখন আমাদের কাছে কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনোভাবেই বৃষ্টিপাত অথবা অন্য কোন কারনে উপরে না উঠে আসে। নিরাপদ জায়গায় এই কাজটি সম্পাদন করতে হবে।

 

টেক্সটাইল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

 

টেক্সটাইল সেক্টরে যেহেতু বিপুল পরিমানে বর্জ্য উংপন্ন হয় এক্ষেত্রে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে বায়াররা বিষয়টি খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করছে। যদি আমরা চাই বিশ্বের বুকে আমরাই এই সেক্টরটিকে ধরে রাখব তবে অবশ্যই সরকারি বেসরকারি ভোক্তা নির্বিষেশে এগিয়ে আসতে হবে বর্জ্য ব্যবস্হাপনাকে সমৃদ্ধ করতে হবে

 

Author Information

Abdullah AL Tushi

Daffodil International University
 
Department of Textile Engineering
 
 

রেফারেন্স : 


1. https://www.researchgate.net
2. https://texpedia.org/
3.http://scholar.google.com/

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Asif Hossain
Asif Hossain

" Unlock Your Creative Potential "