কেভলার ফাইবার হল একধরনের তাপ প্রতিরোধী এবং শক্তিশালী সিন্থেটিক ফাইবার। যেমন নোমেক্স এবং টেকনোমারের মত অন্যান্য অ্যারোমিডগুলির সাথে সম্পর্কিত। সিন্থেটিক ফাইবার বিভিন্ন রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। সিন্থেটিক ফাইবার অন্যান্য ফাইবার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং এদের Tensile Strength ও অন্যান্য ফাইবারের থেকে বেশি হয়ে থাকে।
১৯৬৫ সালে Stephanie Kwolek ডুপেন্ট (DuPont) এ কর্মরত থাকা অবস্থায় এই কেভলার ফাইবারের বিকাশ ঘটান। ১৯৭০ সালে গাড়ির চাকার স্টিলের পরিবর্তে কেভলার ফাইবার ব্যবহার করে প্রথম বাজারজাত শুরু করে। কিন্তু পরে তা বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, বিমান, মোবাইলফোন, নৌকা সহ বিভিন্ন জিনিসে কেভলার ফাইবার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
কেভলারের রাসায়নিক কাঠামোটি বিভিন্ন পুনরাবৃত্তি হওয়া আন্তঃচেন বন্ধন নিয়ে গঠিত। এই চেইনগুলি হাইড্রোজেন বন্ডের সাথে ক্রস লিংকযুক্ত সমান ওজনের ভিত্তিতে ইস্পাতের চেয়ে ১০ গুণ বৃহত্তর একটি প্রসার্য শক্তি সরবরাহ করে। কেভলার হল একটি উৎপাদিত প্লাষ্টিক এবং এটি পলি-প্যারা-ফেনিলিন টেরেফথ্যালামাইড নামে একটি রাসায়নিক যৌগ গঠন করে। এই রাসায়নিকটি একটি এসিড এবং নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন যুক্ত রাসায়নিক সমাধানের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া তৈরি করা হয়।
কোন বস্তুকে হালকা ও শক্তিশালী করে তুলতে কেভলার ফাইবারের কার্যকারিতা অন্যান্য ফাইবারের সাথে অতুলনীয়। কেভলার ফাইবার অন্যান্য ফাইবারের চেয়ে অনেক হালকা এবং এর Tensile Strength অনেক বেশি (2800 MPa)। কেভলার ফাইবার ইস্পাতের চেয়ে ৫ গুন বেশি শক্তিশালী।
কেভলার ফাইবার কম তাপমাত্রায় বেশি শক্তিশালী (-196°C)। উচ্চ তাপমাত্রায় কেভলার ফাইবারের ১০% – ২০% শক্তি হ্রাস পায়।
কেভলার ফাইবার দিয়ে তৈরি কয়েক ধরনের জ্যাকেট রয়েছে যা স্মার্ট টেক্সটাইলকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
১. EDGED BLADE Protection : এগুলো ধারালো অস্ত্র যেমন ছুরি, তলোয়ার ইত্যাদির আঘাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
২. BALLISTIC Protection : এগুলো বন্দুকের বা পিস্তলের বুলেট প্রতিরোধ করে।
৩. SPIKE Protection : সুক্ষ সুচালো অস্ত্র থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
৪. Multi Thread Armour : উপরের সব কোয়ালিটি বিদ্যমান থাকে।
John Wick কে নিশ্চই আমরা অনেকেই চিনি। John Wick এর এই সিজনগুলোতে দেখা যায় নায়ক একটি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে তার শত্রুদের সাথে লড়াই করে। বুলেট তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। আসলে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এর পিছনের কারনটা কি আমরা সবাই জানি…?
আসলে এই বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় কেভলার ফাইবার। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এর প্রথমিক ধারনা পাওয়া যায় ১৮ শতকের দিকে।
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট যেভাবে কাজ করেঃ
আমরা যদি কোন গোলপোস্টের নেটে দূর্দান্ত গতিতে বল দিয়ে শট করি তাহলে নেট ছিড়ে যায়না কেন? কারন আমরা ফুটবল দিয়ে হিট করি নেটের একটি মাত্র অংশে কিন্তু গোলবারের নেট পুরো শক্তিটা শুষে নেয়। ফলে গোলবারের নেট ছিড়ে না। বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্য আরেকটি উদাহরণ দিই। যদি আমারা পুকুরর একটি অংশে পাথর দিয়ে ঢিল দিই তখন ঢিল দেয়ার ফলে যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তা সম্পুর্ন পুকুরে ছড়িয়ে পরে।
ঠিক তেমনি যখন একটি বুলেট বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের নির্দিষ্ট স্থানে আঘাত করে তখন বুলেটের শক্তি সম্পুর্ণ জ্যাকেট এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্যক্তির কোন ক্ষতি হয় না। বুলেটের শক্তি সম্পুর্ণ জ্যাকেটের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি সিরামিক ব্যালাস্টক প্লেট ব্যবহার করা হয়। যা বুলেটের শক্তি শোষণ করতে সাহায্য করে।
তবে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট গায়ে থাকলেই যে আপনি সম্পুর্ণ নিরাপদ ঠিক তেমনটাও কিন্তু না। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট আপনার গায়ে থাকা অবস্থায় কোন বুলেট আপনাকে আঘাত করলে আপনি হয়ত মারাত্মক ভাবে আহত হবেন না। কিন্তু বুলেট আপনার গায়ে লাগলে মনে হবে কেউ আপনাকে ঐ জায়গায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। তবে এই জ্যাকেট আপনাকে বুলেট আপনার শরীরের ভিতরে যাওয়া থেকে আটকাতে পারবে।