১/জামদানি বাংলা শব্দ নয় ।ফারসি থেকেই জামদানি নামের উৎপত্তি বলে অনুমান করা হয়।
২/জামদানি অর্থ বুটিদার কাপড়।
৩/প্রাচীনকালে তাঁত বুনন প্রক্রিয়ায় কার্পাশ তুলার সুতা দিয়ে মসলিন নামে সূক্ষ্ম বস্ত্র তৈরি হতো এবং মসলিনের উপর যে জ্যামিতিক নকশাদার বা বুটিদার বস্ত্র বোনা হতো তারই নাম জামদানি।
৪/জামদানি বলতে সাধারণত শাড়ি বোঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে ঐতিহ্যবাহী নকশায় সমৃদ্ধ ওড়না; কুর্তা, পাগড়ি, ঘাগরা, রুমাল;পর্দা, টেবিল ক্লথ সবই জামদানির আওতায় পড়ে।
৫/জামদানি একধরনের মসলিন।
৬/জামদানি শিল্পকর্ম পরিপূর্ণতা লাভ করে মুগল আমলে। ঢাকা জেলার প্রত্যেক গ্রামেই কমবেশি তাঁতের কাজ হতো।উৎকৃষ্ট ধরনের জামদানি ও মসলিন তৈরির জন্য ঢাকা; সোনারগাঁও, ধামরাই, তিতাবাড়ি, জঙ্গলবাড়ি; বাজিতপুর প্রসিদ্ধ ছিল।
৭/ইউরোপীয়রা ছাড়া ইরানি; আর্মেনিয়ান, মুগল; পাঠান বণিকরা এসব ঢাকাই জামদানি ব্যবসায়ে উৎসাহী ছিলেন। (জামদানি শাড়ি – অজানা তথ্য)
৮/মুগল সম্রাট, বাংলার নবাব ও অন্যান্যদের ব্যবহারের জন্য উৎকৃষ্ট মসলিন ও জামদানি সংগ্রহের জন্য ঢাকায় তাদের গোমস্তা নিযুক্ত ছিল।
৯/১৭৪৭ সালের এক হিসাব অনুযায়ী দিল্লির বাদশাহ; বাংলার নবাব এবং জগৎ শেঠের জন্য সর্বমোট সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার জামদানি কেনা হয়;
১০/ভাল জামদানির জন্য ২০০ থেকে ২৫০ নম্বরের সুতা ব্যবহৃত হতো;
১১/জামদানির সুতা ভোর বেলা কাটা হয়।
১২/ ঐতিহাসিক টেলরের জামদানির বর্ণনা দিয়েছেন; তার বর্ণনানুসারে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১০*২ হাত মাপের ও ৫ শিক্কা ওজনের একটুকরা আব-ই-রওয়ান এর দাম ছিল ৪০০ টাকা। সম্রাট আওরঙ্গজেবের জন্য তৈরি জামদানির দাম ছিল ২৫০ টাকা; ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের জামদানির মূল্য ছিল ৪৫০ টাকা;
জামদানি শাড়ি – অজানা তথ্য
১৩/ জামদানি তৈরির ক্ষেত্রে প্রতি তাঁতে দুজন তাঁতি পাশাপাশি বসে কাজ করেন; দুটি সুচাকৃতি বাঁশের কাঠিতে নকশার সুতা জড়ানো থাকে; প্রয়োজনীয় স্থানে সুচ দুটি দিয়ে পরিমিত টানায় সুতার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে রঙিন সুতা চালিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পাশের সুতার মাকু একজন তাঁতি পাশ থেকে অন্য তাঁতির কাছে দিলে তা সেদিক থেকে বের করে দেওয়া হয়; এভাবে তাঁতে রেখে জামদানি নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।
১৪/ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে সাদা জমিনে সাদা সুতার কাজের সুন্দর জামদানি রক্ষিত আছে।
১৫/নবাব এর পতন এর পর থেকেই জামদানির পতন শুরু হয়; জামদানির জায়গা নেয় ইউরোপ এর কমদামি শাড়ি।
১৬/বিসিক ৫৮৫.৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার; তারাবো ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামে জামদানি শিল্পনগরী ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করে।
১৭/জামদানির বুনন পৃথিবীর অন্য কোনো তাঁতিদের পক্ষে সম্ভব নয়; এমনকি ঢাকার কয়েকটি উপজেলা ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায়ও বোনা সম্ভব হয় না এ শাড়ি।
১৮/মুঘল ও নেপালের আঞ্চলিক পোশাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হত।
১৯/জামদানির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়; আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টাব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে।
২০/ নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন জামদানি বিভিন্ন নামে পরিচিত; যেমন পান্না হাজার, দুবলি জাল, বুটিদার, তেরছা, জালার; ডুরিয়া, চারকোণা, ময়ূর প্যাঁচ, কলমিলতা, পুঁইলতা; কচুপাতা, কাটিহার, কলকা পাড়, আঙুরলতা, সন্দেশ পাড়; প্রজাপতি পাড়, দুর্বা পাড়; শাপলাফুল, বাঘনলি, জুঁইবুটি, শাল পাড়; চন্দ্র পাড়, চন্দ্রহার, হংস; ঝুমকা, কাউয়ার ঠ্যাঙা পাড়; চালতা পাড়; ইঞ্চি পাড় ও বিলাই আড়াকুল নকশা; কচুপাতা পাড়, বাড়গাট পাড়; করলাপাড়, গিলা পাড়, কলসফুল; মুরালি জাল, কচি পাড়, মিহিন পাড়, কাঁকড়া পাড়; শামুকবুটি, প্রজাপতি বুটি, বেলপাতা পাড়, জবাফুল; বাদুড় পাখি পাড় ইত্যাদি।
Author:
Niloy (Bejoy)
(BUFT)
Team Member of (A.1) Team
You may also read
- গাদোয়াল শাড়ি চক্ষু চড়কগাছ করা ১০ টি তথ্য
- ৩ টি ফাইবার যা বস্ত্রখাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনবে
- সিল্ক ফাইবার সম্পর্কে চোখ ধাধানো ১৭টি তথ্য
- স্যার রিচার্ড আর্কারাইড নাপিত থেকে স্পিনিং মেশিনের আবিষ্কারক
- শিল্পে ব্যবহারের উপর নির্ভর করে-সিল্ক ফাইবারের প্রকারভেদ
- ঐতিহ্য মসলিন শাড়ী সম্পর্কে চোখ ধাধানো ২০ টি তথ্য
- সেলাই মেশিন সম্পর্কে চোখ ধাধানো ১৫ টি তথ্য
- বেনারসি শাড়ির অজানা ৮ টি তথ্য যা আপনার চোখ কপালে তুলে দিবে
- মসলিন শাড়ী সম্পর্কে চোখ ধাধানো ২০ টি তথ্য
- বাংলাদেশের তাঁতশিল্পের ইতিহাস-টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প
আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ লাইক করুন। এবং জানতে থাকুন নতুন ও আশ্চর্যজনক তথ্যসমূহ।