হোম টেক্সটাইল এর সম্ভাবনা | Leartex Magazine | Learn Textile

হোম টেক্সটাইল এর সম্ভাবনা

Table of Contents

সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সবকিছুতেই এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনকে সাক্ষী রেখে প্রযুক্তির ধারাবাহিকতায় মানুষ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে হাজারো অসম্ভবকে।
মানুষের চাহিদার পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পরিবর্তন এসেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। যার প্রভাব পড়েছে টেক্সটাইল শিল্পেও। আদিমকালে প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবহার করা বস্ত্রগুলো আজ প্রয়োজন থেকে বিলাসিতা ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে টেক্সটাইল শিল্পের পরিব্যাপ্তি বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে।
.
Join Our Fb Group
.
কোনো হইচই নেই! বিলাসিতা ও আভিজাত্যের ছোঁয়ায় হোম টেক্সটাইল ধীরে ধীরে অনেকটা বড় আকার নিয়েছে বাংলাদেশের অন্যান্য টেক্সটাইলজাত পণ্যের তুলনায়।
 হোম টেক্সটাইলবলতে ঘরের অন্দরের শোভাবর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা বস্ত্রপণ্য কে বোঝায়। ঘরোয়া কাজে ব্যবহৃত হয় বলে এ ধরনের পণ্যকে হোমটেক বা ঘরোয়া টেক্সটাইল ও বলা হয়। হোম টেক্সটাইল টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর।
এক দশক আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে হোম টেক্সটাইলের পণ্য বলতে ক্রেতারা বুঝত চীন, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্কের কথা। এক দশক পরে এসে এ চারটি দেশের পাশে যুক্ত হয়েছে ‘বাংলাদেশ’ নামক দেশটি। যা বাংলাদেশের ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
.

হোম টেক্সটাইল এর সম্ভাবনা

.

 হোম টেক্সটাইলের অন্তর্ভুক্ত পণ্যগুলো হলো – বিছানার চাদর, বালিশ, ডুভেট কভার, কুশন কভার, টেবিল ক্লথ, পর্দা, ফ্লোর ম্যাট, কার্পেট, জিকজাক গালিচা, কার্টেইনস, ফার্নিচারে ব্যবহার করা ফেব্রিক্স, নকশিকাঁথা, খেলনা, কম্বলের বিকল্প কমফোর্টার, বাথরুম টাওয়েল, খাবার টেবিলের রানার, কৃত্রিম ফুল, রান্নাঘর এবং গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত এমন সব ধরনের পণ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ডুভেট কভার।
হোম টেক্সটাইল শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা, পাট, শন, ভেড়া-ছাগলের পশম, লিনেন, কৃত্রিম তন্তু ( যেমনঃ- পলিয়েস্টার, টেফলন, পলিপ্রোপিন, এক্রাইলিক)। এছাড়াও Sendura, Varie, Lintex, Crinkle নামক আধুনিক তন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে।
 বাংলাদেশে অন্যান্য টেক্সটাইল কারখানার তুলনায় হোম টেক্সটাইল কারখানা খুবই কম। ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রামের ২৫-৩০ টি প্রতিষ্ঠান হোম টেক্সটাইল উৎপাদন করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান গুলো হলো- জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড, ইউনি লাইন, সাদ গ্রুপ, অলটেক্স, মমটেক্স, ক্লাসিক্যাল হোম, রিজেন্ট, জেকে গ্রুপ, এসিএস টেক্সটাইল ইত্যাদি। এ প্রতিষ্ঠান গুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় লাখ মিটার
বাংলাদেশে হোম টেক্সটাইলের নেতৃত্ব দিচ্ছে নোমান গ্রুপের জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিকস। এটি ঢাকার অদূরে টঙ্গিতে অবস্থিত। আন্তর্জাতিকভাবে হোম টেক্সটাইলের বাজারে অবস্থান করে নেওয়ার প্রত্যয় থেকে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ২০০০ সালের মার্চ থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায়।
হোম টেক্সটাইল বাংলাদেশের প্রথম লাইন রপ্তানি খাত যা আলংকারিক টেক্সটাইল নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে হোম টেক্সটাইলের পশ্চিমা বড় উল্লেখযোগ্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আইকেইএস, এইচ অ্যান্ড এম হোম, ওয়ালমার্ট, লিডল,টার্গেট, কে-মার্ট ও ক্যালিফোর।
বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারস এক্সপোর্টস এসোসিয়েশন এবং এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর মতে, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি করে আয় হয়েছিল সাড়ে ১৫ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এই রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৯ কোটি ডলার। বিশ্ববাজারে বিলিয়ন ডলারের বেশি হোম টেক্সটাইল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০১১-১২ অর্থবছরে। ঐ অর্থবছরে ১০২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের বিপরীতে রপ্তানি হয় ৯০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরবর্তী সময়ে নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেছে হোম টেক্সটাইল। সর্বশেষ ১১ শতাংশ কমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের।
এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছর আবারো প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন নীতি নির্ধারণ ও খাত সংশ্লিষ্টরা। কোভিড-১৯ ই এ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বলে মনে করেন তারা। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বেশিরভাগ মানুষ বাসায় অবস্থান করছেন। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ বাসায় অবস্থান করছেন ফলে হোম-অ্যাপ্লায়েন্স, বেডিং, কিচেন ইত্যাদি ঘরোয়া পণ্যগুলো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্বাভাবিক সময়ে মানুষ বেশিরভাগ সময় বাহিরে কাটাতো, যার ফলে ঘরোয়া কাজের সময় খুব কম পেতো। এখন উল্টোটা, আবার হোমচর্চাও বেড়েছে। কোভিড-১৯ এ অন্যান্য খাত যখন প্রায় অচল, তখনও আশার আলো দেখাচ্ছে হোম টেক্সটাইল। তাই আগামী দিনগুলোতে হোম টেক্সটাইলের পতনের সম্ভাবনা একদমই নেই, বরং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। উৎপাদন এবং রপ্তানি বেশি হওয়াতে মানুষের কর্মসংস্থান ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলছে।

.

হোম টেক্সটাইল/ হোমটেক

.

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর (২০২০-২১) শেষে ৯৬ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি হতে পারে। হোম টেক্সটাইলের বিশ্ববাজার এখন ১৩১ বিলিয়ন ডলারের। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ১৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
হোম টেক্সটাইল শিল্পের বড় প্রতিবন্ধকতা হলো তুলা। বাংলাদেশে তুলার উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় বৃদ্ধি করতে পারলে হোম টেক্সটাইল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেবে। বিশ্বব্যাপী আরও সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া, বণিক বার্তা, সমকাল, Textile Today, Textile lab, Textileengineers.org, fiber2fashion.

.

About the Author:

মোছাঃ উম্মে হাবিবা

প্রতিষ্ঠানের নামঃ পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।

ডিপার্টমেন্টঃ ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং