কুর্দিস্তান সংকট (Kurdistan Crisis) মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী ভূরাজনৈতিক সমস্যা, যেখানে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, জাতিগত পরিচয়, সন্ত্রাসবাদ, স্বায়ত্তশাসন, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ—সব একসাথে জড়িয়ে আছে। কুর্দিরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রহীন জাতিগোষ্ঠী, যাদের ৩৫–৪০ মিলিয়নের বেশি মানুষ তুরস্ক, ইরান, ইরাক ও সিরিয়া—এই চার দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের বিচ্ছিন্ন অবস্থান, সাংস্কৃতিক পরিচয়, ভাষা, এবং স্বাধীন “Kurdistan” গঠনের আকাঙ্ক্ষা দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক সংঘাত, যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জটিলতার সৃষ্টি করেছে।
✅ ২. কুর্দি পরিচয় ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি
কুর্দিরা মধ্যপ্রাচ্যের পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে বাস করা একটি প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী। তাদের ইতিহাস, ভাষা (Kurdish), এবং সামাজিক কাঠামো (tribal networks) একটি শক্তিশালী জাতিগত পরিচয় তৈরি করেছে।
কুর্দিরা প্রধানত বসবাস করে—
- তুরস্ক: ~১৮ মিলিয়ন
- ইরান: ~৮–১০ মিলিয়ন
- ইরাক: ~৫–৬ মিলিয়ন
- সিরিয়া: ~২–৩ মিলিয়ন
এই ভৌগোলিক বিস্তৃতিই কুর্দিস্তান সংকটকে চারটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
✅ ৩. ঐতিহাসিক পটভূমি: প্রতিশ্রুতির জন্ম ও ভঙ্গ (1920–1923)
✅ ৩.১ সেভরেস চুক্তি (1920): স্বাধীন কুর্দিস্তানের প্রতিশ্রুতি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে Ottoman Empire ভেঙে গেলে সেভরেস চুক্তিতে কুর্দিদের রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা উল্লেখ করা হয়।
➡️ এটি কুর্দি জাতীয়তাবাদকে নতুন জাগরণ দেয়।
✅ ৩.২ লওজান চুক্তি (1923): সব প্রতিশ্রুতির সমাপ্তি
তুরস্কের বিপক্ষে যুদ্ধ জয়ে Mustafa Kemal Atatürk শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং সেভরেস বাতিল করে লওজান চুক্তি করেন—যেখানে কুর্দিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের কোনো উল্লেখ নেই।
➡️ এখানেই শুরু আধুনিক “Kurdistan Crisis”।
✅ ৪. কুর্দিস্তান সংকটের মূল উপাদানসমূহ
✅ ৪.১ জাতিগত পরিচয় বনাম রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা
কুর্দিরা নিজেদেরকে পৃথক জাতি মনে করে—
- নিজস্ব ভাষা
- নিজস্ব সংস্কৃতি
- নিজস্ব ঐতিহাসিক অঞ্চল
- একীভূত জাতির স্বপ্ন
অন্যদিকে চারটি রাষ্ট্রই (তুরস্ক, ইরাক, ইরান, সিরিয়া) মনে করে স্বাধীন কুর্দিস্তান তাদের “ভৌগোলিক অখণ্ডতার হুমকি”।
✅ ৪.২ বিতর্কিত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর উত্থান
PKK – Kurdistan Workers’ Party (Turkey)
- সংক্ষিপ্ত নোট: ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, Marxist-Leninist ভিত্তিক; তুরস্কে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র চায়; তুরস্ক, EU ও US দ্বারা “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে ঘোষিত।
- কুর্দিস্তান সংকটের সবচেয়ে হিংস্র ও বিতর্কিত অংশ।
YPG – People’s Protection Units (Syria)
- সংক্ষিপ্ত নোট: সিরিয়ার কুর্দি মিলিশিয়া; ISIS-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রধান মিত্র; তুরস্ক YPG-কে PKK-এর শাখা বলে বিবেচনা করে।
SDF – Syrian Democratic Forces
- সংক্ষিপ্ত নোট: YPG নেতৃত্বাধীন বহু-জাতিগত বাহিনী; যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা পায়; ISIS-বিরোধী যুদ্ধে বড় ভূমিকা।
Peshmerga (Iraq)
- সংক্ষিপ্ত নোট: ইরাকের Kurdistan Regional Government (KRG)-এর বৈধ সামরিক বাহিনী; ISIS-এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
এসব সংগঠন সংকটকে “জাতিগত সমস্যার থেকে সন্ত্রাসবাদ–নিরাপত্তা সমস্যায়” রূপ দিয়েছে।
✅ ৫. দেশভিত্তিক সংকট: চার রাষ্ট্র, চার ভিন্ন সমস্যা
✅ ৫.১ তুরস্ক–কুর্দি সংকট: সবচেয়ে তীব্র
তুরস্কে কুর্দিরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বসবাস করে, এবং রাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে তাদের সমান সাংস্কৃতিক অধিকার স্বীকৃতি দেয়নি।
কারণ:
- PKK বিদ্রোহ
- রাষ্ট্রীয় দমন
- কুর্দি ভাষা নিষিদ্ধতার ইতিহাস
- জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্ন
➡️ তুরস্কের Kurd–PKK সংঘাত এখনো সমাধান হয়নি এবং শক্তিশালী সামরিক অভিযানে চলমান।
✅ ৫.২ ইরাক–কুর্দিস্তান: আংশিক স্বাধীনতা + তেলের রাজনীতি
ইরাকে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (KRG) আছে।
তাদের নিজস্ব:
- সরকার
- সংসদ
- পতাকা
- Peshmerga বাহিনী
ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চল তেলসমৃদ্ধ, যা তাদের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়িয়েছে।
২০১৭ সালের স্বাধীনতা গণভোট
- ৯২% কুর্দি স্বাধীনতার পক্ষে
- কিন্তু ইরাক, তুরস্ক, ইরান ও US চাপ দেয়
➡️ রাষ্ট্র গঠন হয়নি।
✅ ৫.৩ সিরিয়া–কুর্দিস্তান: ISIS যুদ্ধ ও Rojava প্রকল্প
সিরিয়ার কুর্দিরা Rojava Autonomous Administration গঠন করে—
গণতান্ত্রিক, নারী-অধিকারের ওপর ভিত্তি করে একটি স্বশাসন মডেল।
তবে:
- সিরীয় সরকার স্বীকৃতি দেয় না
- তুরস্ক YPG-কে সন্ত্রাসী মনে করে
- যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সমর্থন করে
➡️ এটি অঞ্চলটিকে সর্বাধিক আন্তর্জাতিকীকৃত কুর্দি সংঘাতে পরিণত করেছে।
✅ ৫.৪ ইরান–কুর্দি সংকট: কঠোর দমননীতি
ইরানে কুর্দিরা কঠোর রাষ্ট্রীয় দমনের মুখোমুখি—
- রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ
- বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান
- মানবাধিকার লঙ্ঘন অভিযোগ
ইরান কুর্দি জাতীয়তাবাদকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখে।
✅ ৬. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কুর্দিস্তান সংকট
✅ ৬.১ যুক্তরাষ্ট্র (US)
- YPG/SDF-এর প্রধান সমর্থক
- কিন্তু “স্বাধীন কুর্দিস্তান” সমর্থন করে না (তুরস্ক–NATO চাপের কারণে)
✅ ৬.২ রাশিয়া
- সিরিয়ায় কুর্দিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে
- কিন্তু তাদের স্বাধীনতা সমর্থন করে না
✅ ৬.৩ তুরস্ক–ইরান–ইরাক–সিরিয়া: চার দেশের সম্মিলিত বিরোধিতা
চার দেশ একমত—
✅ “স্বাধীন কুর্দিস্তান” অনুমোদনযোগ্য নয়
✅ এতে বিচ্ছিন্নতাবাদ ছড়িয়ে পড়বে
➡️ এটাই রাষ্ট্রহীন অবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে।
✅ ৭. বর্তমান পরিস্থিতি (2024–2025)
✅ তুরস্ক
- PKK-এর বিরুদ্ধে তীব্র সামরিক অভিযান (Iraq–Syria border)
- ড্রোন হামলা ও ক্রস-বর্ডার অপারেশন
- YPG/SDF-এর বিরুদ্ধে হুমকি বজায়
✅ ইরাক (KRG)
- কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বাজেট ও তেল রাজস্ব নিয়ে সংঘাত
- অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা
- তুরস্ক–ইরান আক্রমণে সীমান্ত অঞ্চল অস্থিতিশীল
✅ সিরিয়া
- Rojava অঞ্চল এখনো স্বীকৃত নয়
- তুরস্কের সম্ভাব্য সামরিক অভিযান ঝুলে আছে
- মার্কিন–তুর্কি উত্তেজনা পুনরায় বৃদ্ধি
✅ ইরান
- Mahsa Amini আন্দোলনের পর কুর্দি অঞ্চলে কঠোর দমন
- ইরান উদ্বিগ্ন: কুর্দিদের স্বশাসন আন্দোলন বর্ধিত হতে পারে
➡️ সার্বিকভাবে কুর্দিস্তান সংকটের উত্তেজনা ২০২5 সালে কমেনি—বরং আরও সক্রিয়, ছড়িয়ে থাকা এবং বহু-দেশীয় হয়ে উঠেছে।
✅ ৮. কেন কুর্দিস্তান সংকট সমাধান হয়নি?
- চার দেশের বিরোধী অবস্থান
- PKK–YPG–SDF–Peshmerga—বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি
- সিরিয়া–ইরাক–তুরস্ক সীমান্ত নিরাপত্তাহীন
- যুক্তরাষ্ট্র–তুরস্ক বিরোধ
- ইরানের কঠোর দমননীতি
- তেলের অর্থনীতি
- জাতিগত আত্মপরিচয়ের দৃঢ়তা
➡️ সংকট রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা + পরিচয়-রাজনীতি + নিরাপত্তা + আন্তর্জাতিক স্বার্থ—সবকিছুর সংঘর্ষে আটকে আছে।
✅ ৯. উপসংহার
Kurdistan Crisis আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জটিল জাতিগত ও ভূরাজনৈতিক সংঘাতগুলোর একটি। কুর্দিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখনো জীবিত, কিন্তু চার দেশের সম্মিলিত বিরোধিতা, সশস্ত্র সংগঠনের উপস্থিতি, আন্তর্জাতিক স্বার্থের অমিল এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই সংকটকে স্থায়ী করে তুলেছে। ২০২5 সাল পর্যন্ত কুর্দিস্তান প্রশ্ন মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা, তেল–অর্থনীতি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতি, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম কেন্দ্রীয় ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে।
v
নীচে কুর্দি ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে (২০২3–2025) তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের অবনতি (relation breakdown) নিয়ে একটি পরিষ্কার, তথ্যভিত্তিক, BCS-উপযোগী বাংলা বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।
এখানে সিরিয়া, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইরান—এই পাঁচ দেশের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
✅ কুর্দি ইস্যু নিয়ে তুরস্কের সাম্প্রতিক সম্পর্ক-অবনতির বিশ্লেষণ (2023–2025)
✅ ১. তুরস্ক–সিরিয়া সম্পর্ক: সবচেয়ে গুরুতর অবনতি
কারণ:
- তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় YPG/SDF (কুর্দি বাহিনী)–এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছে।
- তুরস্ক মনে করে YPG = PKK-এর শাখা।
- সিরিয়া মনে করে তুরস্ক তার ভূখণ্ড দখল করছে।
ফলাফল:
- সম্পর্ক প্রায় “শত্রু রাষ্ট্র”-মাত্রায় নেমে গেছে।
- নিরাপত্তা আলোচনা বারবার ব্যর্থ।
- সীমান্তে সংঘর্ষ, মানবিক সংকট বৃদ্ধি।
✅ ২. তুরস্ক–যুক্তরাষ্ট্র (US) সম্পর্ক: গভীর কূটনৈতিক ভাঙন
মূল কারণ
- যুক্তরাষ্ট্র ISIS-বিরোধী যুদ্ধে YPG/SDF-কে সর্বাধিক সমর্থন দেয়।
- তুরস্ক এটিকে নিজের জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি মনে করে।
ফলাফল
- দুই দেশের মধ্যে সামরিক সমন্বয় দুর্বল।
- তুরস্ক বারবার অভিযোগ করেছে যে “যুক্তরাষ্ট্র PKK-সংযুক্ত বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে।”
- ন্যাটো-জোটের ভেতরেও উত্তেজনা বেড়েছে।
✅ ৩. তুরস্ক–ইরাক সম্পর্ক: সীমান্ত লঙ্ঘন ও সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে টানাপোড়েন
কারণ
- তুরস্ক উত্তর ইরাকে PKK ঘাঁটিগুলোতে নিয়মিত বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালায়।
- ইরাক বলে—এসব অভিযান তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন।
ফলাফল
- ইরাক সরকার ও Kurdistan Regional Government (KRG)-এর সঙ্গে সম্পর্ক অস্থির।
- আঞ্চলিক উত্তেজনা ও কূটনৈতিক প্রতিবাদ অব্যাহত।
✅ ৪. তুরস্ক–ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) সম্পর্ক: মানবাধিকার ও কুর্দি দমন নিয়ে সমালোচনা
কারণ
- তুরস্কে কুর্দি রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের ওপর দমননীতি বৃদ্ধি।
- EU বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
ফলাফল
- তুরস্কের EU-তে যোগদানের আলোচনায় স্থবিরতা।
- ভিসা, বাণিজ্য, কূটনীতি—সব ক্ষেত্রে ঠান্ডা সম্পর্ক।
✅ ৫. তুরস্ক–ইরান সম্পর্ক: সহযোগিতা ও সন্দেহ—দুই-ই
কারণ
- ইরানেও বড় কুর্দি জনসংখ্যা আছে।
- ইরানও কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করে, ফলে তুরস্ক ও ইরানের মাঝে সীমিত নিরাপত্তা সহযোগিতা আছে।
- কিন্তু সিরিয়া–ইরান–তুরস্ক জোটের মধ্যে ভূরাজনৈতিক স্বার্থে বড় পার্থক্য রয়েছে।
ফলাফল
- কুর্দি ইস্যুতে কিছু সহযোগিতা হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে পারস্পরিক সন্দেহ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায়।
✅ ৬. কুর্দি ইস্যুর কারণে সম্পর্ক ভাঙনের সাধারণ কারণসমূহ
✅ ১. তুরস্কের নিরাপত্তা নীতি:
কুর্দি স্বশাসন বা স্বাধীনতা আন্দোলন তুরস্কের একক জাতীয় পরিচয়ের বিরুদ্ধে যায়।
✅ ২. PKK–YPG–SDF সংযোগ নিয়ে বিরোধ:
তুরস্ক এগুলোকে একই সংগঠনের শাখা মনে করে; পশ্চিমা দেশগুলো তা মানে না।
✅ ৩. সীমান্ত লঙ্ঘন:
তুরস্কের ক্রস-বর্ডার সামরিক অভিযান সিরিয়া ও ইরাকের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে।
✅ ৪. মানবাধিকার প্রশ্ন:
EU–US বারবার সমালোচনা করে; তুরস্ক বলে “এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়।”
✅ ৫. ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা:
যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া–তুরস্ক—সবাই কুর্দি অঞ্চলকে কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করছে।
✅ ৭. 2024–2025 সালের সাম্প্রতিক অবস্থা (সারসংক্ষেপ)
- তুরস্ক উত্তর সিরিয়ায় নতুন সামরিক অভিযান চালিয়েছে → সিরিয়া ও US-এর সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি।
- ইরাক তুরস্কের সীমান্ত অভিযানকে “সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন” বলে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
- EU কুর্দি অধিকার দমনের অভিযোগে কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে।
- তুরস্ক বলছে—“কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকি”, তাই অভিযান চলবে।
➡️ ফল: কুর্দি ইস্যু এখনো তুরস্কের বৈদেশিক সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সংঘাত-উৎপাদক।
“কুর্দি ইস্যু তুরস্কের সিরিয়া, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র ও EU-এর সঙ্গে সম্পর্ককে ক্রমাগত টানাপোড়েনে ফেলেছে, কারণ তুরস্ক PKK/YPG/SDF-কে নিরাপত্তা হুমকি মনে করে—অন্য দেশগুলো তা ‘আঞ্চলিক অংশীদার’ বা ‘অভ্যন্তরীণ জনগোষ্ঠী’ বলে বিবেচনা করে।”
Short Note: তুরস্কের কুর্দি ইস্যু ও সম্পর্ক-অবনতি
তুরস্কের কুর্দি ইস্যু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বিতর্কিত ও সংঘাতপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে উঠে এসেছে। PKK, YPG ও SDF-কে তুরস্ক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে এবং কুর্দি স্বশাসন বা স্বাধীনতাকে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার জন্য হুমকি মনে করে। এই অবস্থানের কারণে তুরস্কের সিরিয়া, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক-অবনতি দেখা দিয়েছে। সিরিয়ার ক্ষেত্রে তুরস্ক উত্তরাঞ্চলে YPG/SDF-এর বিরুদ্ধে একাধিক সামরিক অভিযান পরিচালনা করায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় শত্রুতামূলক পর্যায়ে নেমে এসেছে। ইরাকের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে PKK-র আস্তানা লক্ষ্য করে তুরস্কের সীমান্তপাড়ি সামরিক হামলার কারণে, যা ইরাক তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে দেখে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হয়েছে কারণ মার্কিন বাহিনী ISIS বিরোধী যুদ্ধে YPG/SDF-কে সমর্থন দেয়, যাকে তুরস্ক PKK-এর সম্প্রসারণ বলে দাবি করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক মানবাধিকার ইস্যু, কুর্দি রাজনৈতিক দলের ওপর দমন, সাংবাদিককে আটক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার সীমিত করার অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরানের সঙ্গে কুর্দি প্রশ্নে আংশিক সহযোগিতা থাকলেও ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পারস্পরিক সন্দেহ সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে দেয় না। সার্বিকভাবে, কুর্দি ইস্যু তুরস্কের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে এবং ২০২5 সালেও এর উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
নিচে Kurdistan Crisis–এর সম্পূর্ণ টাইমলাইন (1916–2025) ধারাবাহিক, মুখস্থযোগ্য, BCS–স্টাইল ফরম্যাটে সাজিয়ে দিচ্ছি।
এটি পুরো সংকটের “A–to–Z chronological overview”—BCS লিখিত, ভিভা, IR–প্রস্তুতি—সবকিছুর জন্য আদর্শ।
✅ KURDISTAN CRISIS: FULL HISTORICAL TIMELINE (1916–2025)
✅ ➤ 1916–1946: সংকটের জন্ম
1916 – Sykes–Picot Agreement
- মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপীয় শক্তির মধ্যে ভাগ হয় → কুর্দি অঞ্চল ৪ দেশে ছড়িয়ে পড়ে (তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া, ইরান)।
1920 – Treaty of Sèvres
- কুর্দিদের স্বাধীন রাষ্ট্র “Kurdistan” গঠনের প্রতিশ্রুতি।
(এটাই কুর্দিস্তান জাতীয়তাবাদের ভিত্তি)
1923 – Treaty of Lausanne
- স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি বাতিল → তুরস্কে একক জাতীয় পরিচয় চাপানো।
(কুর্দিস্তান সংকট এখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু)
1930s–1940s
- তুরস্কে কুর্দি বিদ্রোহ (Dersim Rebellion) দমন করা হয়।
- কুর্দি ভাষা নিষিদ্ধ, সাংস্কৃতিক দমন বাড়ে।
✅ ➤ 1946–1990: সংগঠিত কুর্দি জাতীয়তাবাদের উত্থান
1946
- ইরানে “Republic of Mahabad” (প্রথম কুর্দি রাষ্ট্র) স্বল্প সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠা → দ্রুত পতন।
1970s
- ইরাক কুর্দিদের সীমিত স্বায়ত্তশাসন দেয়, কিন্তু পূর্ণ বাস্তবায়ন ব্যর্থ।
1978 – PKK গঠন (Turkey)
- Abdullah Öcalan PKK প্রতিষ্ঠা করেন → স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু।
(পরবর্তীতে বহু দেশের চোখে এটি সন্ত্রাসী সংগঠন)
✅ ➤ 1990–2003: কুর্দিদের আঞ্চলিক শক্তি বৃদ্ধি
1991 – Gulf War
- ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কুর্দিদের “No-Fly Zone” গঠন → কুর্দি স্বশাসন সম্ভব হয়।
1992
- “Kurdistan Regional Government (KRG)” প্রতিষ্ঠা—ইরাকে ডি-ফ্যাক্টো কুর্দি রাষ্ট্র।
1999
- PKK নেতা ওচালান গ্রেফতার → তুরস্কে সংঘাত কমলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
✅ ➤ 2003–2011: কুর্দিস্তানের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি
2003 – US Invasion of Iraq
- ইরাকে কুর্দিদের রাজনৈতিক প্রভাব সর্বোচ্চ হয়।
- Peshmerga US–এর প্রধান মিত্র হয়ে ওঠে।
2005
- ইরাকের নতুন সংবিধানে Kurdistan Region স্বীকৃত।
2011 – Syrian Civil War
- সিরিয়ার কুর্দিরা (YPG) নিজেদের অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়।
✅ ➤ 2011–2017: ISIS যুদ্ধ ও কুর্দিদের আন্তর্জাতিক উত্থান
2014 – ISIS উত্থান
- কুর্দিরা (YPG/SDF, Peshmerga) ISIS-এর বিরুদ্ধে প্রধান বলয় → বিশ্বব্যাপী মর্যাদা বৃদ্ধি।
2014–2017
- US–led anti-ISIS coalition কুর্দিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়।
- তুরস্ক এতে ক্ষুব্ধ, কারণ তারা YPG-কে PKK-এর শাখা মনে করে।
2017 – Iraq Kurdistan Independence Referendum
- ৯২% স্বাধীনতার পক্ষে ভোট → ইরাক, তুরস্ক, ইরান ও US বিরোধিতা করে।
- গণভোট বাস্তবায়ন ব্যর্থ → সংকট গভীর হয়।
✅ ➤ 2018–2021: তুরস্কের ক্রমবর্ধমান সামরিক অভিযান
2018 – Operation Olive Branch
- তুরস্কের সিরিয়ার Afrin অঞ্চলে YPG-এর বিরুদ্ধে বড় আক্রমণ।
2019 – Operation Peace Spring
- তুরস্ক উত্তর সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চল দখল করে; যুক্তরাষ্ট্র–তুরস্ক সম্পর্ক টানাপোড়েন।
2020–2021
- তুরস্ক PKK-এর বিরুদ্ধে ইরাকে ক্রস-বর্ডার অপারেশন চালায় (Northern Iraq raids)।
✅ ➤ 2022–2025: সর্বশেষ ও চলমান সংকট
2022
- US পুনরায় SDF/YPG-কে সমর্থন দেয় → তুরস্ক–US বিরোধ চরমে।
2023
- তুরস্ক উত্তর ইরাকে ব্যাপক বিমান হামলা → ইরাকের কড়া প্রতিবাদ।
- সিরিয়ায় YPG/SDF ঘাঁটিতে তীব্র সংঘর্ষ।
2024
- তুরস্ক নতুন সিরিয়া অভিযান ঘোষণা → US, Syria, EU উদ্বেগ প্রকাশ।
- EU তুরস্কের কুর্দি দমননীতি নিয়ে মানবাধিকার অভিযোগ করে।
2025 (এখনকার পরিস্থিতি)
- তুরস্ক নতুন সীমান্তপাড়ি অপারেশন চালাচ্ছে।
- PKK আংশিক অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়, কিন্তু তুরস্ক তা বিশ্বাস করছে না।
- সিরিয়া–তুরস্ক সম্পর্ক প্রায় ভেঙে গেছে।
- US–Turkey সম্পর্ক ন্যাটোর মধ্যেও উত্তেজনাপূর্ণ।
- ইরাক তুরস্কের আক্রমণকে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বলে নিন্দা করছে।
➡️ ২০২৫ সালে কুর্দিস্তান সংকট সম্পূর্ণভাবে অনিরসনীয় এবং চার দেশের সম্পর্ক-অবনতির কেন্দ্রবিন্দু।
✅ ১০-লাইন মুখস্থযোগ্য সারসংক্ষেপ
- 1920 সালে কুর্দিদের রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু 1923-এ বাতিল হয়।
- কুর্দিরা চার দেশে বিভক্ত হয়ে রাষ্ট্রহীন জাতিতে পরিণত হয়।
- 1978-এ PKK গঠনের পর তুরস্কে সংঘাত তীব্র হয়।
- 1991–2005 সময়ে ইরাকে স্বায়ত্তশাসিত KRG প্রতিষ্ঠা হয়।
- সিরিয়ার যুদ্ধ (2011) কুর্দিদের নতুন স্বশাসনের সুযোগ দেয়।
- ISIS-বিরোধী যুদ্ধে কুর্দিরা আন্তর্জাতিক মিত্রে পরিণত হয়।
- 2017 সালের কুর্দিস্তান গণভোট ব্যর্থ হয়ে সংকট আরও বাড়ায়।
- 2018–2025 সময়ে তুরস্ক PKK/YPG-এর বিরুদ্ধে নিয়মিত সামরিক অভিযান চালায়।
- এতে তুরস্কের US, সিরিয়া, ইরাক ও EU-এর সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- 2025 সালেও কুর্দিস্তান সংকট মধ্যপ্রাচ্যের বড় সংঘাতের কেন্দ্র।
