ফাইবার

লোটাস ফাইবার | লোটাস ইয়ার্ন | বৈশিষ্ট্য, প্রস্তুতি, এবং উপকারিতা |

Lotus Silk - Properties and Uses / লোটাস ফাইবার | লোটাস ইয়ার্ন | বৈশিষ্ট্য, প্রস্তুতি, এবং উপকারিতা |

লোটাস ফাইবার এক ধরনের প্রাকৃতিক ফাইবার যা লোটাসের বৃন্ত থেকে সংগ্রহ করা হয়।লোটাস ফাইবার একটি ট্রিপিক্যাল ফাইবার যার কেলাস ধর্ম ৪৮% ও বিন্যাসধর্ম ৬০%।গড় সংসক্তি ও ইয়ং এর মডুলাস বিবেচনা করলে এই ফাইবার অনেকটা তুলার ন্যায়।লোটাস ফাইবার থেকে তৈরি বিশুদ্ধ লোটাস ফেব্রিককে সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক মাইক্রো ফাইবার বলে আখ্যায়িত করা হয়।

 

এর কতগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যেমনঃ


১/এর ওজন খুবই কম।
২/সিল্কের ন্যায় নমনীয়।
৩/অত্যন্ত সূক্ষ্ম, স্হিতিস্থাপক এবং আরামদায়ক।
৪/অতি আরামদায়ক এবং জীবাণু প্রতিরোধে ক্ষমতা বেশি।
৫/সহজে আদ্রর্তা শুষে নিয়ে শুষ্ক হতে পারে এবং
৬/দীর্ঘদিন টিকে থাকতে সক্ষম ইত্যাদি।


এছাড়াও লোটাস ফ্রেব্রিককে সর্বোত্তম পরিবেশবান্ধব ফ্রেব্রিকও বলা হয়।কারণ এটি লোটাসের কান্ড তথা শাখা থেকে তৈরি হয়।উক্ত প্রক্রিয়ায় কোন রকম রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই একটি বর্জ্যকে মান সম্পন্ন টেক্সসটাইল প্রোডাক্টে পরিণত করা হয়।

 

লোটাস ফাইবারের ইতিহাসঃ

 


মায়ানমারের কম্বোডিয়া গ্রামের অধিবাসীরা শতাব্দী ধরে এই লোটাসের স্টীম থেকে পাওয়া ফাইবার থেকে অত্যন্ত দূর্লভ মানের ফেব্রিক তৈরি করছে যা টেক্সসটাইল এবং ফ্যাশনে এক নতুন ফ্যাসেট। ১৯১০সালে সর্বপ্রথম লোটাস ফুলের স্টিম থেকে লোটাস ফাইবার তৈরি করা হয়।নব্বই দশকের অন্তবর্তী সময়ে জাপানিরা তাদের হস্তশিল্প কারখানার জন্য একটি বৈদেশিক বাণিজ্য গড়ে তোলে।জাপানিয় চাহিদা কম থাকায় তা একটি হাতে বোনা শিল্প ও দুর্লভ হিসেবে রয়ে যায়।পরিবর্তীতে সামোটো ফ্যাশান ফাউন্ডেশনের নতুন উদ্ভাবন করেন এবং এক্সিলেন্সের জন্য ২০১২ সালে ইউনেস্কো পুরষ্কার প্রাপ্ত হন।

 

ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসঃ


ফাইবার সংগ্রহঃ


১/অনেকগুলা লোটাসের শাখা একত্র করা হয় এবং ৫-৬ শাখা একত্রে নিয়ে কর্তন করা হয়।
২/টুইস্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০-৩০টি পরিষ্কার ফিলামেন্ট আলাদা করা হয়।
৩/অতঃপর ড্রাফটিং ও রোলিং করে একটি সুতায় পরিণত করা হয় ইত্যাদি।


ইয়ার্ন প্রস্তুতিঃ

 

১/সুতা তৈরির পর সুতার জটকে বাঁশের তৈরি স্পিনিং ফ্রেমের ওপর রাখা হয়।
২/ওয়ার্পিং প্রসেসের জন্য সুতাকে উইন্ডারে পরিণত করা হয়।
৩/ওয়েফ্ট প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ইয়ার্নকে কুণ্ডলী পাকিয়ে গোলাকার আকৃতি প্রদান করা হয় ইত্যাদি।


উইভিংঃ


১/ঐতিহ্যবাহী কম্বোডিয়ান লুমে ফেব্রিক গঠন করা হয়।
২/উইভিং প্রক্রিয়ার সময় ফাইবারগুলো শীতল রাখার জন্য সুতাকে ধারাবাহিকভাবে পানি দিয়ে ভিজানো হয়।
৩/প্রাকৃতিক ডাইং প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় ইত্যাদি।


লোটাস ফাইবারের বিশেষত্বঃ


এই ফাইবারটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় এই ফেব্রিককে পিওর ফেব্রিক বলা হয়। এটি সর্বপ্রথম ন্যাচারাল মাইক্রোফাইবার।প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় এর অনেক আরোগ্যজনিত গুণাগুণ রয়েছে।লোটাস ফাইবারে তৈরি ফেব্রিক পরিধানকারী প্রশান্তি,আরামদায়ক এবং মেডিটেটিভ অনুভব করে।এছাড়াও এ ফেব্রিক পরিধানকারীর মাথাব্যথা,হৃদরোগ অ্যাজমা ও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের প্রতিকার করে থাকে।

 


লোটাসের ইফেক্ট এবং এর প্রয়োগঃ

 


পদ্ম গাছের সুপারহাইড্রোফোবিক পৃষ্ঠ রয়েছে।জলের ফোঁটাগুলি যেগুলি তাদের উপরে পড়ে তা জপমালা করে গড়িয়ে পড়ে।এই পাতাগুলি কেবল শুকনো থাকে না,বোঁটাগুলি রোল করার সাথে সাথে ময়লার ছোট ছোট কণা বাঁছাই করে যাতে পদ্মের পাতাগুলি- এমনকি স্ব-পরিষ্কার হয়।


পদ্মের পাতার পৃষ্ঠগুলিতে ন্যানোস্ট্রাকচার রয়েছে।এই ন্যানোস্ট্রাকচারগুলি হাইড্রোফোবিক মোম স্ফটিকগুলির সাথে প্রায় ১ এন এম ব্যাসের সাথে লেপযুক্ত এটি ন্যানোস্কেলে পৃষ্ঠকে বেশ রুক্ষ করে তুলে।এই রুক্ষ পৃষ্ঠটি মসৃণ পৃষ্ঠের চেয়ে বেশি হাইড্রোফোবিক।


পদ্মের মতো ইফেক্ট কাপড়ে আনার জন্য প্রথমত আমাদের পদ্মের মতো ন্যানো স্টাকচার আনতে হবে সুপার প্যারাম্যাগনেটিক ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে।এই প্যারাম্যাগনেটিক স্ট্রাকচার ও উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ফিল্ডের কয়েল স্পিনারেটের পর বসানো থাকে।তারপর স্পিনিং করা হয়।এর ফলে প্রাপ্ত সুতা দিয়ে তৈরি ফেব্রিকের মধ্যে আমরা লোটাসের ইফেক্ট পাবো।সাধারণ কাপড়ের উপর পানি পড়লে পানি কাপড়ের মধ্যে প্রবেশ করে।কিন্ত লোটাস ইফেক্ট দেয়ার পর পানি আর প্রবেশ করবে না,অটোমেটিক্যালী কাপড় থেকে ময়লাসহ বাহিরে পড়ে যাবে।এটা শুধু পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়- পানি,কফি,চা,তেল সবক্ষেত্রে লোটাস ইফেক্ট দেয়ার পর একই ফলাফল দিবে। লোটাস ইফেক্ট মূলত স্যুট,প্যান্ট,কোর্ট,টেবিল কাভারে দেয়া হয়।

 

উপকারিতাঃ


১/মেডিকেডিট প্রোডাক্ট হিসেবে অনেক ফলদায়ক।
২/বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ও এটি ফলপ্রসূ।
৩/অ্যালার্জিজনিত সমস্যার প্রতিকারে লোটাস ফাইবারের ভূমিকা অপরিসীম।

 

অবশেষে বলতে পারি যে,শুধু কম্বোডিয়ার মতো দেশে এই ফেব্রিক সীমাবদ্ধ না রেখে পৃথিবীর প্রতিটা দেশে যদি লোটাস ফাইবারের বিস্তার সম্ভব হয়।তাহলে টেক্সসটাইল ও ফ্যাশান জগতে আমূল উন্নয়ন সম্ভব হবে।

 

সোর্সঃ
#উইকিপিডিয়া,
#টেক্সসটাইল ল্যাব ফর টেক্সসটাইল সল্যুশন,
#টেক্সসটাইল ইন্জিনিয়ারস।

 

About the Writer

 

ফারজানা আহমেদ হ্যাপী


বি.জি.এম.ই.এ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশান এন্ড টেকনোলজি


অনার্স চতুর্থ বর্ষ।

 

 

Follow us on Google  News

 

 

You May Also Read: 

 

 

 

 

 

 

Orgiline

About Author