আফগানিস্তান–পাকিস্তান সংকট দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় দীর্ঘদিনের একটি জটিল দ্বিপাক্ষিক সমস্যা, যার মূল সূত্রপাত ১৮৯৩ সালের দুরান্ড লাইন চুক্তি থেকে। ব্রিটিশ ভারতের পর আফগানিস্তান ও বর্তমান পাকিস্তানের মধ্যকার ২,৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্ত রেখা আজ পর্যন্ত আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এই রেখা পুশতুন জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশকে দুই দেশে ভাগ করে দেয়, যা জাতিগত পরিচয়, স্বায়ত্তশাসন এবং সীমান্তনিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নকে আরও জটিল করে তোলে। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পর ১৯৪৭ সালে তারা দুরান্ড লাইনকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে ধরে নেয়, তবে আফগানিস্তান এটিকে অবৈধ বলে মনে করে—ফলে স্বাধীনতার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়।

১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর সংকট আরও গভীর হয়। পাকিস্তান তখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে আফগান মুজাহিদিনদের প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময় লাখো আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে প্রবেশ করে, যা পরবর্তী কয়েক দশকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা পরিবেশে বিশাল চাপ সৃষ্টি করে। সোভিয়েত প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ক্ষমতার লড়াই ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উত্থান পুরো সীমান্ত অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তোলে।

১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তান তাদের অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক সমর্থক হয়ে ওঠে। পাকিস্তান মনে করেছিল—তালেবানের মাধ্যমে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আসবে এবং ভারতের প্রভাব কমবে। তবে তালেবান সরকারের আদর্শিক কঠোরতা, সীমান্তে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা এবং দুরান্ড লাইন স্বীকৃতির প্রশ্নে অনমনীয় অবস্থান দুই দেশের মধ্যে আস্থাহীনতা অব্যাহত রাখে। ২০০১ সালে ৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালালে পাকিস্তান ‘ফ্রন্টলাইন এলাই’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ায়। এ সময় আফগান সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে—সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, বিশেষ করে হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও তালেবানের কিছু অংশকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে। অন্যদিকে পাকিস্তান অভিযোগ করে—আফগানিস্তান TTP বা Tehrik-e-Taliban Pakistan সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানের ভেতরে শত শত ঘাতক হামলা চালিয়েছে।

২০০৭ সালে TTP গঠনের পর পাকিস্তানের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের ঢেউ তীব্র আকার ধারণ করে। সীমান্তের দুই পাশে তালেবান, আল-কায়েদা, হাক্কানি নেটওয়ার্ক এবং TTP-এর উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও চাপের মুখে ফেলে। সীমান্তের দুর্গম ভূপ্রকৃতি জঙ্গিদের চলাচল ও অস্ত্র পাচার সহজ করে তোলে, ফলে প্রতিনিয়ত সীমান্ত সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও নিরাপত্তাজনিত টানাপোড়েন দেখা দিতে থাকে।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার ও তালেবানের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর পাকিস্তান আশা করেছিল—দুই দেশের সম্পর্ক নতুনভাবে উন্নত হবে। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো হয়। নতুন তালেবান সরকার দুরান্ড লাইন মানতে অস্বীকৃতি জানায়, TTP-র বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় না এবং সীমান্তবাণিজ্য, ভিসা, কূটনীতি—সব ক্ষেত্রে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মানবিক সংকট ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়। ২০২৪–২০২৫ সালে TTP হামলা বৃদ্ধি, সীমান্তে টার্মিনাল বন্ধ, গোলাগুলি, বাণিজ্যিক রুট বন্ধ এবং রাজনৈতিক অবিশ্বাস—সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে এই সংকট মূলত তিনটি বড় বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে—(১) দুরান্ড লাইন স্বীকৃতি, (২) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয় সংক্রান্ত অভিযোগ, এবং (৩) শরণার্থী ও সীমান্তবাণিজ্য ইস্যু। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য এই দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলেও গভীরভাবে নজরকাড়া।

এ প্রেক্ষাপটে ভারত–আফগানিস্তান সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে এবং কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারত ও আফগানিস্তানের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও ঐতিহাসিক সংযোগ থাকলেও ২০০১ সালের পর এই সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবিলা, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, মধ্য এশিয়ায় প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা—এসব কারণে ভারত আফগানিস্তানের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদারে পরিণত হয়। ভারত আফগান পার্লামেন্ট ভবন, সালমা ড্যাম, জারাঞ্জ-দেলারাম মহাসড়ক, মেডিকেল সাপোর্ট, স্কলারশিপসহ অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, যা আফগান জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি ইতিবাচক আস্থা তৈরি করেছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও কাবুলে তার দূতাবাস আংশিকভাবে পুনরায় খুলেছে, মানবিক খাদ্য ও ওষুধ সহায়তা পাঠিয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ‘মানবিক ও উন্নয়নভিত্তিক সম্পৃক্ততা’ বজায় রেখেছে। বর্তমান সময়েও ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে মূলত তিনটি কারণে—(১) পাকিস্তান ও চীনের আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবিলা, (২) সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি গোষ্ঠীর সীমান্ত ব্যবহারের ঝুঁকি কমানো, এবং (৩) মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সংযোগ ধরে রাখা। ফলে, তালেবান শাসন সত্ত্বেও ভারত–আফগানিস্তান সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে না গিয়ে বরং সীমিত কিন্তু কৌশলগত মানবিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে টিকে আছে।

 

Memorization Sheet (Super-Short Key Points)

 

A. Afghanistan–Pakistan Crisis (Main Points)

১. দুরান্ড লাইন ইস্যু (১৮৯৩)

  • আফগানিস্তান স্বীকৃতি দেয় না
  • পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্ত মনে করে
  • পুশতুন বিভাজন → জাতিগত উত্তেজনা

২. সোভিয়েত আগ্রাসন (১৯৭৯)

  • মুজাহিদিনকে পাকিস্তানের সমর্থন
  • শরণার্থী প্রবাহ
  • উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উত্থান

৩. তালেবানের উত্থান (১৯৯৬)

  • পাকিস্তানের সমর্থন
  • সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের সক্রিয়তা
  • সীমান্তে অস্থিতিশীলতা

৪. ২০০১–২০২১: সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ

  • পাকিস্তানের বিরুদ্ধে “সেফ হ্যাভেন” অভিযোগ
  • TTP vs Pakistan
  • হাক্কানি নেটওয়ার্ক, আল-কায়েদা ইস্যু

৫. বর্তমান উত্তেজনা (২০২১–২০২৫)

  • তালেবান দুরান্ড লাইন মানে না
  • TTP হামলা বাড়ছে
  • সীমান্তে সংঘর্ষ ও বাণিজ্য রুট বন্ধ
  • শরণার্থী ফেরত পাঠানো নিয়ে বিরোধ

B. India–Afghanistan Relations (Main Points)

১. ঐতিহাসিক–সাংস্কৃতিক সম্পর্ক

  • গন্ধারা সভ্যতা, মুঘল সংযোগ
  • মানুষের মধ্যে আস্থা

২. ভারতের উন্নয়ন সহায়তা

  • সালমা ড্যাম
  • আফগান পার্লামেন্ট
  • জারাঞ্জ–দেলারাম মহাসড়ক
  • স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বৃত্তি

৩. ভূ-রাজনৈতিক কারণ

  • পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবিলা
  • মধ্য এশিয়া অ্যাক্সেস
  • চীন–পাকিস্তান অক্ষ নিয়ন্ত্রণ
  • সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি কমানো

৪. তালেবান সরকারের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্ক (২০২১–২০২৫)

  • আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই
  • কিন্তু মানবিক সহায়তা চলছে
  • দূতাবাস সীমিতভাবে পরিচালিত
  • IS-K ও পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠী নিয়ে উদ্বেগ
  • নীতি: “সতর্ক সম্পৃক্ততা”

C. 10-Line Exam Version (Quick Revision)

  1. দুরান্ড লাইন ইস্যু দুই দেশের প্রধান বিরোধ।
  2. পুশতুন বিভাজন জাতিগত অস্থিরতা বাড়িয়েছে।
  3. সোভিয়েত যুদ্ধ পাকিস্তানকে মুজাহিদিনের ঘাঁটিতে পরিণত করে।
  4. তালেবানের উত্থান ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক সীমান্ত সংকট গভীর করে।
  5. ২০০১–২০২১ সময়ে উভয় দেশ একে অপরকে “সেফ হ্যাভেন” দেওয়ার অভিযোগ করে।
  6. TTP পাকিস্তানের বড় নিরাপত্তা হুমকি।
  7. তালেবান দুরান্ড লাইন মানতে অস্বীকৃতি জানায়।
  8. সীমান্তে সংঘর্ষ, বাণিজ্য বাধা ও শরণার্থী সংকট বাড়ছে।
  9. ভারত–আফগান সম্পর্ক ঐতিহাসিক, উন্নয়নমুখী ও কৌশলগত।
  10. তালেবান আমলে ভারত “স্বীকৃতি নয়, কিন্তু মানবিক সহায়তা” নীতি অনুসরণ করছে।

D. Ultra-Short Mnemonic (15 Seconds)

AP Crisis Mnemonic: “D-S-T-T-C”

Durand Line
Soviet War
Taliban Rise
Terror Safe-Haven Accusation (TTP)
Current Border Conflict

India–Afghan Mnemonic: “H-D-G-T”

Historical ties
Development projects
Geopolitics (Pakistan/China)
Taliban era limited engagement